
উজ্জ্বল কুমার জেলা প্রতিনিধি নওগাঁঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে নৃগোষ্ঠী আদিবাসী পরিবারের উকিল পাহান (৩২) নামে এক যুবককে গাছে বেঁধে রেখে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা গোপন রেখে স্থানিয়ভাবে বসে মিমাংসার নামে হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হলো ব্যর্থ। হত্যাকান্ডের শিকার উকিল পাহানের ছোট ভাই মহাদেবপুর থানায় মামলা দায়ের করলে মামলার পরই মহাদেবপুর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার ভুক্ত ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেলা কারাগারে প্রেরন করেছেন।উল্লেখ্য- নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার স্বরুপপুর গ্রামের নৃগোষ্ঠী আদিবাসী পাড়ায় গত ৬ অক্টোবর সোমবার লক্ষী পূজার রাতে উকিল পাহান নামে এক যুবককে কবিরাজি করার সন্দেহে গাছের সাথে বেঁধে রেখে পিটিয়ে হত্যা করার পর কৌশলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ৭ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় হত্যাকান্ডে জড়ীতরা। দায়িত্বরত চিকিৎসক উকিল পাহানকে মৃত ঘোষনা করেন এবং মৃতদেহে একাধীক আঘাতের চিহ্ন থাকায় নওগাঁ সদর মডেল থানায় জানালে পুলিশ পৌছে প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট অন্তে ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ হস্তান্তর করেন। মৃতদেহ গ্রামে আনার পর হত্যাকান্ডে জড়ীত ও তাদের সহযোগীরা উকিল পাহানের পরিবারকে বলে ঘটনাটি নিয়ে হৈ চৈ না করে আমরা বসে মিমাংসা করে দিব সহ নানাভাবে বুঝিয়ে মঙ্গলবার রাতেই সৎকাজ দাহ সম্পূর্ণ করে। হত্যা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে ঘটনার ৩ দিন পর প্রতিবেদককে ( নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি ) ঘটনাটি জানালেন। প্রতিবেদক স্বরুপপুর গ্রামে সরজমিনে গিয়ে ঘটনার তথ্য সংগ্রহ এবং মুঠোফোনে ”প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তদন্ত কর্মকর্তা ও নওগাঁ সদর মডেল থানার এসআই তাহের” এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, সুরতহাল রিপোর্টকালে লাশের শরীরে একাধীক জখমের চিহ্ন সহ শরীরের কিছু চামড়া ছিলা অবস্থায় দেখা যায় যা সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। কবিরাজ সন্দেহে যুবককে গাছে ঝুলিয়ে কবিরাজি করার সন্দেহে আদিবাসী এক যুবককে গাছেবেঁধে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ’ করা হয়। পরের দিন বুধবার ১৫ অক্টোবর উকিল পাহানের ছোট ভাই সুকিল পাহান মহাদেবপুর থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫/২০ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে ঐ রাতেই মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন রেজা’র নের্তৃত্বে ওসি (তদন্ত) আব্দুর রহিম, সেকেন্ড অফিসার এসআই আসাদুজ্জামান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনোয়ার হোসেন সবুজ ও মহাদেবপুর থানাধীন নওহাটামোড় পুলিশ ফাঁড়ির আইসি এসআই মোস্তফাসহ সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্সনিয়ে স্বরুপপুর গ্রাম ও আশে পাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার এজাহার ভুক্ত ৮ জন আসামীর মধ্যে ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার করেন পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ৬ জন হলেন, স্বরুপপুর গ্রামের মৃত লগেন পাহানের দুই ছেলে পরিমল পাহান (৩২) ও প্রদ্যুৎ কুমার পাহান (২৮) একই গ্রামের সুরেন পাহানের ছেলে রানা পাহান (২৪), মৃত মন্টু পাহানের ছেলে মিলন পাহান (৩৫), জানু পাহানের ছেলে নিমাই পাহান (৩০) ও বিশা পাহানের ছেলে রবি পাহান (৪০)। ৬ জনকে গ্রেফতারের সত্যতা নিশ্চিত করে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহীন রেজা প্রতিবেদককে জানান, গ্রেফতারকৃত ৬ জনকে বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে এছাড়া এজাহার নামীয় অপর দু’জন সহ ঘটনার সাথে জড়ীতদের আটকের জন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। তিনি মামলার বরাত দিয়ে আরো বলেন, ১ মাস আগে ঐ গ্রামের লগেন পাহান নামে এক ব্যক্তি গলায় ফাঁসদিয়ে আত্নহত্যা করার পর লগেন পাহানের ছেলে প্রদ্যুৎ পাহান ও তাদের প্রতিবেশি যুবকরা উকিল পাহান কবিরাজি করে তার কবিরাজি’র প্রভাবে লগেন পাহান আত্নহত্যা করিয়াছে এমন অভিযোগ তুলে তারা উকিল পাহানের উপর ক্ষিপ্ত ছিল সেই ক্ষোভে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ৭ অক্টোবর রাত ৩ টারদিকে উকিল পাহানকে গ্রামের পাপস কারখানার নিকট একটি মেহগনি গাছের সাথে বেঁধে মারপিট করায় উকিল পাহান নিস্তেজ হয়ে পরলে মারপিটকারীদের ভেতর কয়েকজন ভোর সকালে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সকাল ৭ টারদিকে উকিল পাহানের মৃত্যু হয়। সংবাদ পেয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানা পুলিশ ইউডি মামলার পর লাশের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট অন্তে ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করলেও সে সময় ঘটনাটি মহাদেবপুর থানায় জানানো হয়নি। পরবর্তীতে আপনার সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারি এর পরই উকিল পাহানের ছোট ভাই সুকিল পাহান মহাদেবপুর থানায় মামলা করলে আমরা ঐ দিনই অভিযান চালিয়ে এজাহার ভুক্ত ৬ জন আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে নওগাঁ জেলা কারাগারে প্রেরণ করি।
Leave a Reply